রাজ্যের পরিষদীয় মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়ের পর এবার ভূতুড়ে বা ভুয়ো ভোটার তালিকা নিয়ে প্রবল সংশয় ও উৎকণ্ঠা প্রকাশ করলেন রাজ্য বিধানসভার অধ্যক্ষ তথা তৃণমূল কংগ্রেসের প্রবীণ বিধায়ক বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়।সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫) তাঁকে বলতে শোনা যায়, 'আমার অঞ্চলেও অনেক ভুয়ো ভোটারের নাম আছে। কারও কারও বাড়ি শিলিগুড়ি। এসডিও, বিডিও অফিস থেকেই তো ভোটার তালিকা তৈরি করা হয়। আমাদের জনপ্রতিনিধিদের দায়িত্ব খুব সীমিত। কোন নাম তোলা হবে বা বাদ দেওয়া হবে, এটাই শুধু আমরা করতে পারি। কিন্তু এত ভুয়ো ভোটার আসছে কী করে, তা সত্যিই চিন্তার!'বিমানের এই মন্তব্য থেকেই স্পষ্ট, ভোটার তালিকায় ভুয়ো ভোটারদের বাড়বাড়ন্তের নেপথ্যে রাজ্যের সরকারি আমলা - যেমন - বিডিও ও এসডিও-দের একাংশের ভূমিকা নিয়েই সরাসরি সংশয় প্রকাশ করেছেন তিনি। তাঁর বার্তা, হয়তো এর পিছনে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনিক কর্তাদের একাংশের ভূমিকা থাকতে পারে। যা সত্যি হলে, সেটা প্রকৃতই যে কোনও গণতন্ত্রের পক্ষে উদ্বেগের বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।একইসঙ্গে, শোভনদেবের মতোই ভুয়ো ভোটারদের নিয়ে সরাসরি বিজেপিকে কাঠগড়ায় তুলেছেন বিমান। তিনি প্রশ্ন তোলেন, 'বিজেপি কি এই ঘটনায় যুক্ত? সবাই জানে কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনকে কে বা কারা পরিচালনা করে!' এমনকী, এই বিষয়টি নিয়ে মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫) তিনি নিজে তাঁর বিধানসভা এলাকার সংশ্লিষ্ট বিডিও এবং এসডিও-র কাছে ডেপুটেশন দেবেন বলেও জানিয়েছেন বিমান।যে কাজটি ইতিমধ্যেই সেরে ফেলেছেন পরিষদীয় মন্ত্রী তথা খড়দার বিধায়ক শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়। সোমবারই উত্তর ২৪ পরগনার জেলাশাসক শরদকুমার দ্বিবেদীর কাছে এই বিষয়ে নিজের উদ্বেগের কথা জানিয়ে স্মারকলিপি জমা করেছেন তিনি।শোভনদেব এই প্রসঙ্গে বলেন, 'মহারাষ্ট্র, দিল্লি, হরিয়ানায় ভূতুড়ে ভোটার নিয়ে অভিযোগ উঠেছে। ভোটার তালিকায় নাম তোলার জন্য অনলাইন আবেদনের ক্ষেত্রে সঠিকভাবে যাচাই করা হচ্ছে না। বিজেপি এমন একটা ভোটার তালিকা তৈরি করতে চাইছে, যাতে ছাব্বিশের নিবার্চনে তারা জিততে পারে। প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী-সহ একাধিক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ও বিভিন্ন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে এনেও বাংলায় বিজেপি জিতছে পারেনি। তাই এই পথ নিয়েছে।'এর আগে সন্দেহ ও আশঙ্কার এই সুর শোনা গিয়েছিল স্বয়ং বাংলার মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের গলাতেও। গত ১০ ফেব্রুয়ারি বিধায়কদের নিয়ে আয়োজিত বৈঠকে এই বিষয়ে সকলকে সতর্ক করেন মুখ্যমন্ত্রী। এবং সমস্ত ভুয়ো ভোটারকে চিহ্নিত করে, তাঁদের যাতে তালিকা থেকে বিদায় করা যায়, তা নিশ্চিত করার নির্দেশ দেন। তারপর থেকেই রাজ্যজুড়ে একেবারে তৃণমূলস্তরে এই ভোটার যাচাইয়ের কাজ শুরু করে দিয়েছে রাজ্যের শাসকদল।উল্লেখ্য, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে নতুন ভোটার তালিকা প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন। তৃণমূল নেতৃত্বের নির্দেশ, প্রত্যেক অঞ্চল ও পুরসভায় বুথ ধরে ধরে সেই তালিকা স্ক্রুটিনি করতে হবে। কোনও নাম নিয়ে সন্দেহ হলেই সেই ভোটারের অস্তিত্ব এবং তিনি আসল না ভুয়ো, তা যাচাই করে দেখতে হবে। প্রয়োজনে তাঁকে ফোন করতে হবে এবং তাঁর বাড়ি গিয়ে তথ্য যাচাই করতে হবে। পরবর্তীতে সমস্ত সন্দেহভাজনের নামের তালিকা তৈরি করে তা রিটার্নিং অফিসারের হাতে তুলে দিতে হবে।