সানরাইজার্স হায়দরাবাদের দেওয়া পাহাড় প্রমাণ রানের বোঝা মাথায় নিয়ে শেষ পর্যন্ত লড়াই করেছিল রাজস্থান রয়্যালস। তারা ২৮৭ রান তাড়া করতে নেমে ৬ উইকেট হারিয়ে ২৪২ রানে পৌঁছেও গিয়েছিল। আইপিএলের ইতিহাসে এটি রাজস্থান রয়্যালসের সর্বোচ্চ দলীয় স্কোর। এর আগে তারা ২০২০ সালে কিংস ইলেভেন পঞ্জাবের বিরুদ্ধে ৬ উইকেটে ২২৬ রান করেছিল। সেই নজির এদিন টপকে যান সঞ্জু স্যামসনরা♑। কিন্তু শেষ রক্ষা হল না। রানটা বড় বেশি করে ফেলেছিল হায়দরাবাদের দল। যার নিটফল, লড়াই করেও ৪৪ রানে হারতে হল রাজস্থান রয়্যালসকে।
দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দলীয় স্কোর হায়দরাবাদের
ꦰইশান কিষানের বিধ্বংসী শতরান ট্র্যাভিস হেডের মারকাটারি হাফ-সেঞ্চুরিতে প্রথমেই কেঁপে গিয়েছিল রাজস্থান রয়্যালস ব্রিগেড। নিজেদের প্রথম ম্যাচেই একেবারে ঝড় তুলেছিলেন ইশান, হেডরা। যার নিটফল, আইপিএলের ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দলীয় রানের রেকর্ড গড়ল সানরাইজার্স হায়দরাবাদ। মাত্র এক রানের জন্য আইপিএলের ইতিহাসে সর্বকালের রেকর্ডটি ভাঙা হল না।
আরও পড়ুন: 🃏IPL-এর ১৮ বছরের ইতিহাসে ১৮তম বার শূন্যতে আউট রোহিত শর্মা, গড়লেন লজ্জার নজির
📖রবিবার উপ্পলে রাজস্থান রয়্যালসের অধিনায়ক রিয়ান পরাগ টস জিতে সানরাইজার্স হায়দরাবাদকে প্রথমে ব্যাট করতে পাঠায়। আর এটাই বোধহয় বুমেরাং হয়ে যায়। ৬ উইকেট হারিয়ে হায়দরাবাদের দল করে ২৮৬ রান। প্রসঙ্গত, আইপিএলের ইতিহাসে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ডটিও রয়েছে সানরাইজার্স হায়দরাবাদের দখলে। তারা ২০২৪ আইপিএলে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর বিরুদ্ধে ২৮৭ রান করেছিল। এটি আইপিএলের সর্বোচ্চ দলীয় স্কোর। মজার বিষয় হল, আইপিএলের ইতিহাসে সব থেকে বেশি রানের দলগত ইনিংসের সেরা পাঁচের তালিকায় প্রথম তিনটি স্থান দখল করে রেখেছে সানরাইজার্স হায়দরাবাদ। চার নম্বরে রয়েছে কেকেআর। পাঁচ নম্বরে ফের নাম রয়েছে হায়দরাবাদের। অর্থাৎ, সেরা পাঁচে চার বার রয়েছে হায়দরাবাদ।
হেড-ইশান ঝড়
♔এদিন শুরু থেকেই ঝড়ের গতিতে রান তুলতে শুরু করেছিলেন ট্র্যাভিস হেড। হায়দরাবাদ পাওয়ার প্লে-র ৬ ওভারে ১ উইকেটের বিনিময়ে ৯৪ রান করে ফেলেছিল। আইপিএলের ইতিহাসে পাওয়ার প্লে-তে তোলা পঞ্চম সর্বোচ্চ রান এটি। যদিও এই নিরিখে সর্বকালীন রেকর্ড রয়েছে হায়দরাবাদের দখলেই। তারা গত বছর অরুণ জেটলি স্টেডিয়ামে দিল্লি ক্যাপিটালসের বিরুদ্ধে পাওয়ার প্লে-র ৬ ওভারে বিনা উইকেটে ১২০ রান সংগ্রহ করেছিল। এদিন ট্র্যাভিস হেড শুরুটা করেছিলেন, শেষ করলেন ইশান কিষাণ।
আরও পড়ুন: 🅠৪ ওভারে দিলেন ৭৬ রান, IPL-এর ইতিহাসে সবচেয়ে ব্যয়বহুল বোলার হিসেবে লজ্জার রেকর্ড জোফ্রা আর্চারের
🌊হায়দারাবাদের হয়ে এদিন ওপেন করতে নেমেছিলেন অভিষেক শর্মা এবং ট্র্যাভিস হেড। শুরু থেকেই দুই ওপেনার মারকুটে মেজাজে শুরু করেছিলেন। ৫টি চারের হাত ধরে ১১ বলে ২৪ করে অবশ্য আউট হয়ে যান অভিষেক। কিন্তু ইশান কিষাণকে সঙ্গে নিয়ে ঝড় তোলেন হেড। ২১ বলে নিজের হাফসেঞ্চুরি পূর্ণ করে ট্র্যাভিস হেড। তবে শেষ পর্যন্ত ৯.৩ ওভারে আউট হয়ে সাজঘরে ফেরেন হেড। তখন দলের স্কোর ১৩০ রান। ৩১ বলে ৬৭ করে হেড আউট হন। তাঁর ইনিংসে ছিল ৯টি চার এবং ৩টি ছক্কা। ট্র্যাভিস হেডের স্ট্রাইক রেট ছিল ২১৬.১২। হেড আউট হলেও রানের গতি কমতে দেননি ইশান। তিনি বড় বড় শট খেলতে শুরু করেন। ২৫ বলে হাফসেঞ্চুরি পূরণ করেন ইশান। ৪৫বলে শতরানের মাইলস্টোন স্পর্শ করেন। এটি আইপিএলে ইশানের প্রথম সেঞ্চুরি। হায়রাবাদের জার্সিতে অভিষেকেই সেঞ্চুরি করে নজর কাড়েন ইশান। শেষ পর্যন্ত তিনি ৪৭ বলে ১০৬ রান করে অপরাজিত থাকেন। তাঁর ইনিংস সাজানো ছিল ১১টি চার এবং ৬টি ছক্কায়। এছাড়াও ১৫ বলে ৩০ করেন নীতিশ কুমার রেড্ডি, ১৪ বলে ৩৪ করেছেন হেনরিখ ক্লাসেন।
♏এদিন রাজস্থান রয়্যালসের সব বোলারকেই পিটিয়ে ছাতু করেছেন হায়দরাবাদের বোলাররা। নীতিশ রানা মাত্র ১ ওভার বল করে ৯ রান দিয়েছিলেন। বাকিদের ইকোনমি রেট ১০-এর উপর। এদিন রাজস্থানের সবচেয়ে সফল বোলার তুষার দেশপাণ্ডে। তিনি ৪ ওভার বল করে ৪৪ রান দিয়ে ৩ উইকেট তুলে নিয়েছেন। বাকিদের অবস্থা তথৈবচ। সবচেয়ে বেশি মার খেয়েছেন জোফ্রা আর্চার। তিনি চার ওভারে ৭৬ রান দিয়েছেন। যা আইপিএলের ইতিহাসে সবচেয়ে ব্যয়বহুল স্পেল।
আরও পড়ুন: 🐬4-6-0-4-1W-4-4- পঞ্চম ওভারে ট্র্যাভিস হেডের পিটুনি খেয়ে চোখে শর্ষেফুল আর্চারের, এল ২৩ রান
মাটি আঁকড়ে লড়াই রাজস্থানের
ꦑজবাবে রান তাড়া করতে নেমে মাটি আঁকড়ে লড়াই করতে থাকেন সঞ্জু স্যামসনরা। তবে পাওয়ার প্লে-র মধ্যে তারা তিন উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে গিয়েছিল। ওপেন করতে নেমে চূড়ান্ত ব্যর্থ যশস্বী জয়সওয়াল। তিনি ৫ বলে ১ রান করে আউট হয়ে যান। তিনে নেমে ২ বলে ৪ করে সাজঘরে ফেরেন রিয়ান পরাগ। চারে নেমে নীতিশ রানা ৮ বলে ১১ রান করে আউট হন। ৪.১ ওভারে ৫০ রানে তিন উইকেট হারিয়ে যখন মারাত্মক চাপে রাজস্থান, সেই সময়ে সঞ্জু স্যামসন হাল ধরে রেখেছিলেন। তিনি পাশে পান ধ্রুব জুরেলকে। চতুর্থ উইকেটে তাঁরা ১১১ রানের পার্টনারশিপ গড়েন, যেটা রাজস্থানের জন্য বড় অক্সিজেন হয়। ৭টি চার এবং চারটি ছক্কার হাত ধরে সঞ্জু ৩৭ বলে ৬৬ করে আউট হয়ে গেলেও রানের গতি কমেনি রাজস্থানের। ৩৫ বলে ৭০ করেন ধ্রুব জুরেল। মারেন হাফডজন ছক্কা এবং পাঁচটি চার। জুরেল আউট হলে শিমরন হেতমায়ের এবং শুভম দুবে মিলে ষষ্ঠ উইকেটে লড়াই চালান। চারটি ছয় এবং ১টি চারের হাত ধরে ২৩ বলে ৪২ করেন হেতমায়ের। চারটি ছয় এবং ১টি চারের সৌজন্যে ১১ বলে ৩৪ করে অপরাজিত থাকেন শুভম দুবে। তবে শেষ পর্যন্ত রাজস্থান রয়্যালস ম্যাচটি ৪৪ রানে হেরেই যায়।
🐬হায়দরাবাদের বোলারদের মধ্যে সিমরজিৎ সিং এবং হর্ষাল প্যাটেল ২টি করে উইকেট নিয়েছেন। মহম্মদ শামি এবং অ্যাডাম জাম্পা নিয়েছেন একটি করে উইকেট।